রাশেদুল ইসলাম :
পুলিশ মানেই খারাপ নয়। মানুষ বিপদে পড়লে পুলিশের কাছে আসে। তারা শুধু চান একটু ভাল ব্যবহার আর কাঙ্খিত সেবা। সেই সেবাটুকু নিশ্চিত করতে পারলেই তারা অনেক খুশি। আমার চাকরি জীবনে সমাজ ও সাধারণ মানুষের চাহিদাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি।
কণ্ঠে অসীম দৃঢ়তা নিয়ে বলছিলেন
মোঃ হাসানুজ্জামান কক্সবাজার পুলিশ সুপার থেকে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (এডিশনাল ডিআইজি) পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত৷
গত ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান নিহতের ঘটনায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাসের সাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে দেখা যায় এ বি এম মাসুদ হোসেনকে কক্সবাজার থেকে রাজশাহী জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে বদলী করা হয়েছে।
এ প্রজ্ঞাপনে কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ঝিনাইদহ জেলার এসপি হাসানুজ্জামানকে।
পরবর্তীতে সে হত্যা কণ্ডের ঘটনায় এক পর্যায়ে প্রায় চৌদ্দশত পুলিশ কক্সবাজার থেকে এক যোগে বদলী হয়৷
কক্সবাজারে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের পর নতুন করে জেলা পুলিশ কে সাজাতে এবং জনবান্ধব করতে তৎক্ষালিন ঝিনাইদহ জেলার চৌকস, দক্ষ, সৎ পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামানকে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়৷
এসপি হাসানুজ্জামান ঝিনাইদ অবস্থানকালে সৎ ও নিষ্ঠাবান একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন জনগনের কাছে৷
কক্সবাজারের পুলিশ সুপারের দায়িত্ব নেয়ার পর পুলিশের প্রতি স্থানীয় জনসাধারণের আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে নীতির প্রশ্নে অটল থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করেছেন মোঃ হাসানুজ্জামান৷
কেবল যে কক্সবাজারে চাকরিতে সৎ পুলিশ কর্মকর্তার উদাহরণ হিসেবে তিনি নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন বিষয়টি তেমন নয়।
পুলিশে ১৯ বছরের চাকরি জীবনের পুরোটা সময়েই কখনো নিজের গায়ে কালো ছায়া পড়তে দেননি ২২তম ব্যাচের এ কর্মকর্তা।
পুলিশে প্রায় সবাই ওয়াকিবহাল তার সততার প্রশ্নে। কাড়ি কাড়ি টাকা কামানোর স্রোতে নিজেকে না ভাসিয়ে বরাবরই বিপরীতে পথ চলেছেন।
পুলিশে চাকরি করেও এটা কীভাবে সম্ভব, প্রশ্ন করতেই নিজের বাবা’র দেয়া শিক্ষার কথাই সামনে আনলেন।
সোমবার (৬ জুন) বিকেলে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে বসে বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলছিলেন, শৈশবেই আমার বাবা আমাকে দু’টি কথা প্রায়ই বলতেন।
তার একটি ছিল আমার সন্তান কখনো টাকার লোভে পড়বে না। পুলিশে চাকরির সময়ে সব সময় বাবার দেয়া শিক্ষাটাই স্মরণ করেছি। বাকী জীবনটাতেও বাবার এ শিক্ষাকে মাথায় রেখেই পথ চলবো। আমার নিজের সন্তানদেরও সেইভাবে মানুষ করতে চাই। ’
পুলিশ সুপার মোঃ হাসানুজ্জামান পিপিএম (সেবা) (৭৬০৩০২৭৮৩৯) কে বৃহস্পতিবার ৬৩৩ নম্বর স্মারকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ শাখা-১ এর উপ সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাশ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এসপি মোঃ হাসানুজ্জামানসহ ৭৩ জন একই পদমর্যাদার বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের কর্মকর্তাকে এডিশনাল ডিআইজি পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
এডিশনাল ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়া কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোঃ হাসানুজ্জামান (পিপিএম) ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারে যোগদান করেন।
এসপি থেকে এডিশনাল ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়া মোঃ হাসানুজ্জামান বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে উত্তীর্ণ হয়ে ২০০৩ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পুলিশের চাকুরীতে যোগ দেন। সরকারি চাকুরির শুরুতে সহকারী পুলিশ সুপার হিসাবে তিনি ঠাকুরগাঁও র্যাব-৪ এ এবং লালমনিরহাট জেলা পুলিশে দায়িত্ব পালন করেন। সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হিসাবে নোয়াখালী জেলায় দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
এসপি হাসানুজ্জামান উপ পুলিশ কমিশনার হিসেবে ডিএমপিতে সফলতার সহিত দায়িত্ব পালন করেন৷ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন-ঝিনাইদহ ও লক্ষীপুর জেলা পুলিশে।
মোঃ হাসানুজ্জামান পিপিএম জাতিসংঘের শান্তি মিশনে কৃতিত্বের সাথে গুরুত্বপদে দায়িত্ব পালন করেছেন ২ বার।
নড়াইল জেলার বাসিন্দা মোঃ হাসানুজ্জামান কক্সবাজারে এসপি’র দায়িত্ব নেওয়ার আগে ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার (এসপি) হিসাবে ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর যোগদান করে ২০২০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেখানে দায়িত্ব পালন করেন। দক্ষ, মেধাবী ও চৌকস এ পুলিশ কর্মকর্তার প্রায় ১৯ বছরের চাকুরী জীবনে প্রতিটি কর্মস্থলে সফলতার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন।
পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান বলেন, পুলিশ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা পায় মানুষের মন থেকে। এবং তা অসম্ভব নয়। সেটি সম্ভব শুধু কাজের মাধ্যমে। দায়িত্ব পালনে পেশাদারিত্বের গুনে একজন পুলিশ কর্মকর্তা মানুষের মনে আসন করে নেন।
আমাদের পুলিশ সার্ভিসে অসংখ্য ভাল লোক আছে। যারা পয়সা খায় না। আবার শতকরা ৮০ ভাগ পুলিশ সদস্যের পয়সা খাওয়ার কোন সুযোগই নেই।
দেখা গেছে, কক্সবাজারের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এডিশনাল ডিআইজি পদে পদোন্নতি পাওয়া কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোঃ হাসানুজ্জামান’র সাফল্য ও প্রভাব ছিল ইতিবাচক। তার বর্তমান সময়ে কক্সবাজার সদরসহ পুরো জেলায় অপরাধ প্রবণতাও অনেক কমে এসেছে।
নিজের উদ্যম, পরিশ্রম আর মেধার সমীকরণে পুলিশ প্রশাসনের ভাবমূর্তি বিনির্মাণে নীরবে কাজ করে যাওয়া পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান’র বর্তমান সময়ে মাদক এবং অস্ত্রধারী অপরাধীরা অনেক কমেগেছে৷
তার সময়ে অপরাধ চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সব ধরনের অপরাধ নেমে এসেছে অর্ধেকে।
মামলা মোকদ্দমার সংখ্যাও কমেছে। এমনকি মিথ্যা মামলার সংখ্যা ব্যাপক মাত্রায় হ্রাস পায়। যার প্রভাব পড়ে সমাজ জীবনে। কমে যায় দাঙ্গা, হাঙ্গামা বা উত্তেজনার ঘটনা প্রবাহ। মাদকের বিরুদ্ধেও ছিল তার জিরো টলারেন্স নীতি।
পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান’র নির্দেশে দেশের সর্ববৃহৎ ইয়াবার চালান উদ্ধারের এমন সফলতা ও তিনি অর্জন করেছেন৷
এসব বিষয়ে পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের রোলটা পজিটিভ। একদিকে অভিযান চলছে, অন্যদিকে যারা মাদকাসক্ত থেকে ভাল হতে চায় তাদের আবার ভাল হওয়ার সুযোগ দিচ্ছি৷
পাঠকের মতামত